চম্পারন সত্যাগ্রহ

  • উনিশ শতকের ছয়ের দশক থেকেই বিহারের চম্পারনে নীলচাষকে কেন্দ্র করে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অসন্তোষ জমতে থাকে ।
  • এখানকার নীলকর সাহেবরা তিন কাঠিয়া ব্যবস্থার ( কৃষকের মােট জমির ৩/২০ অংশে অর্থাৎ প্রতি বিঘা বা ২০ কাঠা জমির ৩ কাঠায় নীলচাষ ) প্রয়ােগ ঘটিয়ে কৃষকদের শােষণ করতেন ।
  • তাদের ওপর জোর করে বিভিন্ন খাজনা ও কর চাপানাে হত । ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে কৃত্রিম নীলের প্রচলন ঘটলে নীলচাষ ক্ষতির সম্মুখীন হয় । ফলে চাষিরা আন্দোলনে নামে ।
  • এই পরিস্থিতিতে গান্ধীজির নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে ভারতের প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় ।
  • গান্ধীজির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের তীব্রতার জেরে ব্রিটিশ বাধ্য হয়ে ‘ চম্পারন অনুসন্ধান কমিটি ’ ( ১৯১৭ খ্রি. ১০ জুন ) ( Champaran Agrarian Enquiry Committee ) গঠন করতে । এই কমিটির সুপারিশক্রমে ‘ চম্পারন কৃষি বিল ’ পাস করিয়ে ㅡ
    • ‘ তিন কাঠিয়া ’ প্রথার অবলুপ্তি ঘটানাে হয়
    • কৃষকদের ওপর নির্ধারিত খাজনার হার ২০-২৬ শতাংশ কমানাে হয় ।



আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গুজরাতের আমেদাবাদে গুজরাতি বস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল , তা আমেদাবাদ শ্রমিক আন্দোলন ( ফেব্রুয়ারি , ১৯১৮ খ্রি. ) নামে পরিচিত ।
  • এখানেই তিনি সর্বপ্রথম অনশন ধর্মঘটের হাতিয়ার প্রয়ােগ করেন ।

আন্দোলনের কারণ

  • ১৯১৮ সাল নাগাদ আমেদাবাদে প্লেগ রােগ মহামারির আকার নিলে বহু শ্রমিক কাজ ছাড়তে উদ্যত হওয়ায় , ব্রিটিশ সরকার শ্রমিকদের কারখানার কাজে উৎসাহিত করার জন্য প্লেগ বােনাস চালু করে । কিন্তু প্লেগ মহামারির প্রকোপ ধীরে ধীরে কমে আসলে শ্রমিকদের প্রাপ্য এই বােনাস বন্ধ করে দিলে শ্রমিকরা বিক্ষুদ্ধ হয় ।
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা শতকরা ৫০ ভাগ মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানালে মালিকপক্ষ তা নস্যাৎ করে দেয় । এর ফলে শ্রমিকশ্রেণী আন্দোলন শুরু করে ।

আন্দোলন ও গান্ধীজির ভূমিকা

  • আমেদাবাদ শ্রমিক আন্দোলনে গান্ধীজি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন । মিল মালিকদের কাছে গান্ধীজি মজুরি বাড়ানাের দাবি করেন , কিন্তু এই দাবি ব্যর্থ হয় ।
  • মিল মালিকরা একজোট হয়ে লকআউট ঘােষণা করে । দু সপ্তাহ এভাবে চলার পর মিল মালিকদের পক্ষ থেকে মজুরদের জন্য সামান্য বেতন বৃদ্ধির কথা ঘােষণা করা হয় ।
  • তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে গান্ধীজি শ্রমিক মজুরদের নিয়ে উপযুক্ত বেতন বৃদ্ধির দাবি জানান এবং অবশেষে শুরু করেন ভারতে তাঁর প্রথম অনশন ।

ফলাফল

  • গান্ধীজির অনশনের চতুর্থ দিনের মাথায় মালিক পক্ষ ৩৫ ভাগ মজুরি বৃদ্ধি করতে সম্মত হন ।
  • গান্ধীজীর নেতৃত্বাধীন আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের পরিণতি হিসেবে পরবর্তী সময়ে গঠিত হয় ‘ টেক্সটাইল লেবার অ্যাসােসিয়েশন ’ ( ১৯২০ খ্রি. ) ।
  • পরবর্তীকালের রাজনীতিতে ‘ অনশন ধর্মঘট ’ এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয় ।